Friday, November 7, 2014

কালের কড়চা, ভল্যুম - হালুম


কলকাতাই নববাবু-নববিবি মহলে হালে কাফেলা, কফিলা প্রভৃতি শব্দ একবৎসরকাল হল কানে আসছিলো। আগেভাগেই আমি সারেণ্ডার করিয়া কইছি বাপু, 'হুজ্জৎ-এ-বাঙ্গাল' শব্দটির প্রসার আজাদীধ্বনিত কাশ্মীর অঞ্চল হ'তে, অতএব নববাবুরা নববিবিরা আমায়ে মারবেন না প্লীজ, আমি কচিনবদলশ্যামকোমল এবং তৃণাদপি নীচ কিনা, মারলে ব্যাথা পাই মনে। যাহা হৌক, প্রতিবাদের ভাষা প্রতিরোধের আগুন সেবার শহরে গিয়ে দেখলাম, ধকধকে লেলীহান।
এইবার আবার কেরল হ'তে প্রতিধ্বনিত চকাসধ্বনি কানে এলো সেই আগুনের আঁচেই। শুনিলাম। নেহাৎ মন্দ লাগিলো না। সে উপপ্রসঙ্গ মাত্র। যারে কয়, পোলাপান। আমি ভিন্ন চিজ বাৎলাবার মৎলব ঠাউরেছি।
সৌভাগ্য এই যে, নববিবি-নববাবুরা সফদর হাশমিকে কখনোই সে'মত 'সি-পি-এমের লোক' ঠাহরে নাই। হে বীর শিল্পশহীদ, তোমার ভাগ্য এইঠাঁয়ে প্রসন্ন, 'উই শ্যাল ওভারকাম'-এর ন্যায়ই 'হল্লা বোল'-কে ইহারা 'সিপিএমের শ্লোগান' ঠাহরে নাই। যদিও সলিলবাবুর কপাল মন্দ, তাঁহার ক্ষেতের কিষান কলের মজুরেদের ইহারা গ্রাম নগর মাঠ পাথার বন্দরে জোটবাঁধার ডাক পাঠায় নাই অদ্যপি। ইহাদের, অর্থাৎ এই সকল নববাবু-নববিবিদের বিশেষ কিশান-মজদুর দেখা হয় নাই, নগর এবং মাঠ কিছু দেখিয়া থাকিলেও বেচারিরা পাথার বা গ্রাম বিশেষ দেখিয়া থাকে নাই, এবং বন্দর যেক'টি দেখিয়াছে তাহার অধিকাংশই খপোতঘাঁটি, এবং গোঁদের উপর টনটনায়িত বিষফোঁড়ায় ন্যায় উহারা বাল্যে ও কৈশোরে আনন্দবাজার-দর্পনে জোট বাঁধা দেখিয়াছে, লাখে লাখ লোকের ডাকা হরতাল দেখিয়াছে, অতএব, হে সলিল, তোমার সমাধি হৌক প্রাকে মিউটিনিরত, হালে মিউমিউরত বোম্বাইবন্দরের নিকটস্থ বলিউড উপত্যকায়। মিউমিউদের উপেক্ষা করিলেই চাপ সৃষ্টি হয় সকল নিম্ন এলাকাতে, ইহা আজ কে নাহি জানে?
যাহা হৌক, সলিল তুমি দূর দিন ঢলিয়া যাও। শহীদ, তুমি হল্লা বলিও সস্ফুর্তিতে, কেননা হল্লার সহিত কলিকাতাস্থ নববিবি-নববাবুর সত্যজিৎ-কনেকশন। অথবা রে-কনেকশন। অথবা মাণিকবাবু-কনেকশন।
কমরেড হাশমির রাজনগরীর ভার্চুদিওয়ারে মৌলবান্দর বেরাদরদিগকে রুধিবার অভিপ্রায় উহাদের চমকিয়ে চামকিয়ে চামকাচামকির হাঁক পাড়িয়াছে, দেখিলাম তথাস্থ নববাবুবিবিগণ। চলচপলারচকিতচমকে চমকাইলাম - উহারা 'কমরেড'-হাঁক পড়ে! একই হাঁকের দুইকচি কলি এই কলিকাতাস্থ এবং পাত্রপাত্রীবিশেষে কলিকাহস্ত নবদলশ্যাম নববাবু-বিবি-দিগের কণ্ঠেও শুনিয়াছিলাম যখন বিগত মাসে কলিকাতায় সশরীরে ভবমায়ার রব কর্ণগোচর হৈয়াছিলো, খানিকটা সিদ্ধ-চালের ভাত এবং রোহুমুণ্ডের আখেরেই এই মধুরধ্বনি কর্ণকুহরে প্রবেশিলা সেইকালে। যেমতি অই মধুরাক্ষর প্রবেশিলা নয়ানপটে বিগত রজনীর দিল্লিদিওয়ার দরশনে।
কলিকাতাস্থ নববাবু-বিবি-গণ বাল্যে ও কৈশোরের সুকুমার-সুকুমারী বয়সকালে কমরেড অভিধায় একাধারে চে গুয়েভারা (আমি অই খ্যাপাকে নিটোল শান্তিপুরী উচ্চ্বারণেই স্মরণ করি, যাহাতে কতিপয় নববাবু-বিবি-র নসিকা সিঁটকোপ্রায় হইতে পারে বোধ জাগে।) এবং স্বর্গতঃ বিনয় কোঙার, অস্বর্গতঃ খপোত বসু এবং অপরধারে মহামহিম স্তালিনজনাব, মহাছত্রী কিষেন জনাব ও উহার মেকুড়কণ্ঠী দাদাজনাব সকলকেই এককমাত্র মুর্তিরূপকে চিনিয়াছিলেন জীবনের ও বাজারের সানন্দে ভাসিয়া। অতঃপর ভাসানের গান শুনে খড় আর ঘর গেল ভেসে। দশোরথস্য চৌবাচ্চার একের রাজ্যাভিষেক বাঙ্গালার বুকে সেদিনও অদ্যের ন্যায় সমাগত হয় নাই, ভিত্তি নির্মাণ হইয়াছিলো মাত্র।
অদ্য, কার্তিকান্তের উত্তুরে প্রভাতী বাতাস অধমকে এই মর্মে সন্দেশ প্রেরিলা এই যক্ষধন্য বিন্ধ্যাচলে যে বাঙ্গালার হালকালের স্বল্পায়ু লিডিং অপোসিশানের খানদানি জায়দাদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে এবং বেহুলার ন্যায় ভাসিতে ভাসিতেই কখনো হলদি হয়েছে কখনো গাঙুড় কখনো কোপাই নদীদের স্বরলিপি হ'য়ে'ছে এবং, চক্ষুকর্ণাদি ইন্দ্রিয়ময় কল্পদ্রুমে কুহরিছে পিক কমরেড-কাননে। বেহুলারূপা হাবুকফাট অই ছিন্ন খঞ্জনাও বুঝি কালযোগে স্বপ্নভঙ্গ নির্ঝর হয়ে তবে!
সহসা পূণঃ ইন্দ্রিয়কুহরে ভাসিয়া আসে দুখমিষ্ট চকাসধ্বনি। ভাবিলাম নক্সী-ক্যাঁতামুরি হ'য়ে রূপাই-সাজু ওষ্ঠাধর মিলাইয়াছে। দেখিলাম, তাহা নহে। মহামতী গোখলেসায়েব মহা আফসোসে জর্জরিত হইয়া সক্ষেদে মুণ্ড হেলাইতেছেন। হেলাইতে হেলাইতেই সে মাস্টারমশায় তাঁহার ব্ল্যাকবোর্ড হইতে Bengal, India, World, Today, Tomorrow, Day After ইত্যবিধ শব্দগুলি মুছিতেছে, লিখিতেছে, অর্ডারে রি-আরেঞ্জ করিতেছে, Think শব্দটির সিনট্যাকটিক অবস্থান লইয়া তাঁহাকে সবিশেষ চিন্তিত বোধ হইল। এইরূপ নানাপ্রকার দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যেই তাঁহাকে দেখিলাম।
এই সকল অদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্য দিয়াই ২০১৪-র অন্তঃভাগ হইতে আমার মনে এই বোধ ক্রমশ উদয় হইতে থাকিলো যে এই সকল কলকাতাই হালফ্যাশানের নববাবু-নববিবিদল খচ্চর হইলেও, তদুপরি অসহায় নহে। বলি ক-বাবু, খ-বাবু, গ-বাবু ও ঘ-বাবুদের কি এই বোধ জেগেচে?

No comments: