Sunday, September 28, 2014

পুজো আসছে। ২০১৪।

জাতে ওঠার লোভ। যখনই শহরে আসি, বা ফেসবুকে নাড়াঘাটা করি, বা আমার ব্যক্তিগত নাগরিক শিকড়ে কোনোভাবে টানাপোড়েন চলে, তখনই চারিদিকে এই জাতে ওঠার লোভ, সমস্ত শহরে, সমস্ত মধ্যবিত্তি কাফেতে, অটোতে, বহুতল ও কিছুতলে, থরথর করছে জাতে ওঠার লোভ। ঐ লোভকেই টোপ বানিয়ে ইউনিয়ন কার্বাইডের মালিক আর বস্তারের পুলিশের হনুমানভক্ত হেড অ্যাণ্টিlলিয়ার ছাব্বিশ নম্বর তলায় বসে স্কটল্যাণ্ডের মহুয়া খেতে খেতে যে বিলোলকটাক্ষিণীর ক্ষীণকটিময় থরোথরে লিপ্ত হয়, সেই ক্ষীণকটিনী তার পর যার লালসায় দেহ পাতে সে তার কিছু আগেই কাশ্মীরে টন ছটাক টি-এন-টি আর মনিপুরে পোনে ডজন লাইট মেশিন পাঠিয়েছিলো এবং কিছু পরে তার নতুন প্রোডাকশানের কণ্ট্র্যাক্টে ফাইনালী সই করবেন বলিউডকা শান-এ-শান লুঙ্গিবাদশা
জাতে উঠতে গেলে এসব নিয়ে ভাবতে নেই। ক্ষীণকটিনীর কথা ভেবে হাত মারা যায় অবশ্য, তাতে জাতে ওঠার কোনো সমস্যা হয় না, আর গেকোর সেই অমোঘ বচনই যেহেতু সার, সেহেতু শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ ধনস্বপ্নে। বড় হয়ে উহারা ক্ষীণকটিনীর নিকটতর অঞ্চলে স্ব-স্ব-ধন চালনা কারুক, সেই স্বপ্নেই বিভোর হয়ে উহাদের জাতে উঠতে থাকা মাতাপিতা উহাদের গান, নাচ, বাজনা, আবৃত্তি, সাঁতার, ক্রিকেট, উত্তর-ইউক্লিডিও মাল্টিপ্লেনার জ্যামিতি, বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাসে নাথ-উপাসকদের ভূমিকা, ড্রোণের কোন সুইচ-টা টিপলে গ্রামটার উপর বোমাটা ঠিকঠাক পড়ে, ছেচল্লিশের নৌবিদ্রোহে অরুণা আসফ আলির বীরত্ব, ডিমিস্থিনিসের দাদুর নাম, অক্ষয়চাঁদ বড়ালের তৃতীয় নাতনীর নাম, প্রভৃতি বিষয়ে সুশিক্ষিত করতে থাকে।
আর তখনই, সমাজসেবী মেয়েকে আমেরিকা পাঠানোর জন্য তার মা শুয়ে পড়েছে হিলারি ক্লিণ্টনের ইউনিভার্সিটিতুতো বন্ধুর আই-এ-এস পরীক্ষায় এককালে ফিফথ হওয়া সেজো-শালার সাথে, মেয়ে শুয়ে পড়েছে ইউনিয়ন কার্বাইডের মালিকের ভায়রাভায়ের সাথে, মা-মেয়ের বহুতল-মধ্যমতলের সেবাদাসীটির বোনঝি শুয়ে পড়েছে বস্তারের কোনো এক থানার হাবিলদারের পিতলের পাত লাগানো হনুমানছাপ লাঠির আগা অথবা ডগার সাথে।
তাতে কার কি গ্যাছে ছেঁড়া?
Que sera sera.
এবার পুজোয় লাক্স ভিভেল আম্রপল্লী সার্বজনীন সবার সেরা!
আমি সুস্বপ্ন দেখি আমার নাতনী বা নাতি বা তাদের নাতনী বা নাতি বা তস্য বা তস্য তস্য - কারুর একটা জীবদ্দশায় অনেককিছু পালটে নেওয়ার জন্য ভারতীয় উপমহাদেশের ভূখণ্ড জুড়ে বিরাট একটা গণঅভ্যুত্থান ঘটবে, যা হয়তো সমগ্র এশিয়া বা চাই কি সমগ্র বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়বে। আমার যুক্তিবাদী মন জাতে ওঠার উদ্দেশ্যে যতটুকু পড়েছে আর দেখেছে তাতে তো হ্যানো স্বপ্ন যথার্থই র‍্যাশানাল প্রতিভ হয়।
আমি দুঃস্বপ্ন দেখি, আমার ও আমার উত্তরসুরীদের জাতে ওঠার অদম্য তাগিদ সেই লড়াইতে আজকের মত প্রহারক থাকবে না। যে অদম্য তাগিদে আজ আমি প্রহারক, সেই তাগিদের কারণেই তারা সেইদিন হবে প্রহৃত।
তাতে কার কি গ্যাছে ছেঁড়া?
Que sera sera.
हम दिल दे चुके सनम तुम क्या झाँट उखरोगे मेरा?
ঈষৎ বঙ্কিম শরৎ এলো। মা আসছেন। মার দশখানা হাত। এক হাতে লাক্স ভিভেল, এক হাতে সানরাইস গুঁড়ো মশলা, এক হাতে বিরাট কম্প্রেসিভ স্ট্রেন্থ সিমেণ্টের একদা বিরাট শারীরিক স্ট্রেন্থের অধিকারী কাটনীর বাসিন্দা এক ঠিকা-মজদুরের রক্তলাগা বস্তা, এক হাতে বলিউডের শান-এ-শানের তুতো ননদের অ্যাটেস্টেড ব্রা, এক হাতে গার্নিয়ারের এন-জি-ও কর্মিনীদের বিশেষ পছন্দ স্পেশাল 'দেখে য্যানো মনে হয়ে বহুদিন চুলে তেল দেয় না' শ্যাম্পু কাম কণ্ডিশানার, এক হাতে খোকাবাবুর লালজুতো পড়া হাসি হাসি ব্যাককভার সমন্বিত পুজাসংখ্যা মার-মার-কাটতি ধর্ষকাম পত্রিকা, এক হাতে সবার পছন্দ ছোট্ট টিপ হালকা লিপ্সটিক শাড়ির মোড়কে হাসি হাসি খুকিবেবি, এক হাতে ছোট্টন্যানোর নতুন চাবি এগিয়ে দিচ্ছে বেহালার ব্র্যাডম্যান, এক হাতে ছোট্টন্যানোর কোম্পানির বড়কত্তাদের মস্তিষ্কপ্রসুত 'সেভ দ্য গার্ল চাইল্ড'-লেখা এবং উড়িশ্যার দুখি আদিবাসী তনয়ার সেই হাসিমুখ-প্যাম্ফলেট যার কারণে ন্যানোকোম্পানি পেতে চলেছে ২০০% ট্যাক্স এক্সেমশান। এই হল নয়টা হাতের হিসাব। দশ নম্বর হাতে কি সেটা বুঝতে একটু সময় লাগলো। ঐ যে ন'নম্বর হাতের প্যাম্ফলেটের তনয়া, সে যখন বস্তারের হাবিলদারের হনুমানছাপ পিতলডগা লাঠির সঙ্গে শুয়েছিলো, তখন তার ছিন্ন হাইমেন, থ্যাঁতলানো ইণ্ট্র্যটাস আর আধাথ্যাঁতলানো সার্ভিক্স-অঞ্চল থেকে নিসৃত রক্ত।
তাতে কার কি গ্যাছে ছেঁড়া?
Que sera sera.
Devanand passes away, end of an era.
সেই তনয়ার রক্তে উর্বর হোক সব্বাইকার জাতে ওঠার স্বপ্নগাছের গোড়া। পুজোয় সবাই মস্তি করো, প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে বাজুক কলির নচিকেতা ও বাবুলের সুপ্রিয়। সবার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।

No comments: