যে চর্যা ব্রাহ্মণ্যবাদী তা করো পরিহার
ভীমাঘাতে হানো, শম্বুকরোষে করো চুরমার যা কিছু সাংস্কৃত সব
যা কিছু বেঁধেছে প্রজন্ম, বেঁধেছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ভূমি, বেঁধেছে রুধির‘শুদ্ধি’ শাসনে অপ্রেমে
তীক্ষ্ণ ফলায় কেটেছে জাতিনাম কৌম কপালে, ভৌমগর্ভে গেঁথেছে জলজ্যান্ত যাপন, এঁটেছে
মাটি ও রুটির পথ –
তুমি তো কালাপাহাড় – তুমি, শাপমুক্ত অহল্যার রোষে
ফুঁসিয়ে অসুরবৃত্তের সবকটা মাথা – মহেঞ্জোদারো নগর-প্রাচীরের সমস্ত সেচদ্বার –
বানভাসি সেই দুঃশাসনের উত্তরপ্রবেশ পথে –
সরিয়ে নাও তার চোখের সামনে থেকে
দধীচির ঘাতক বজ্রকাঁটা!
ওই তো নগরীর দ্বার, ঐখানে, সারিবদ্ধ কঙ্কালস্তুপ,
কয়েকটা ঝুলছে ফাঁসিকাঠ থেকে, কয়েকটা হাঁড়িকাঠে লুটিয়ে নদী ও শ্মশানে –
সেইখানে, মরারুণ লাল আভা স্রোতে – মাটিতে অপরাধ চিহ্ন
পিতৃঘাতে প্রতিজ্ঞ-প্রোজ্জ্বল কিশোর ভরত বনানীর গভীর কুটিরে -
– নগর অন্দরে, প্রাসাদে, আলিন্দে –
অট্টহাসে বাহুজয়ী পৌরুষ, পুঁজিপাঁতি জুড়ে ভাড়াটে খসখস,
প্রভাতে পাঠশালে শৈশব হবে নীলকণ্ঠ, চাটু-পাটু বিরচিত হবে ইতিহাস, সাহিত্য,
রূপকথারা হয়ে যাবে মীথ, মীথগাথারা হয়ে যাবে শোষকের অজুহাত-ইস্তেহারকল্প -
গেলো, উগড়োও, খাতায় খাতায় জাত্যাভিমানী পরোয়ানা বয়ে ইঁদুরদৌড়, আর্য্যসাফল্য – পুণঃ অট্টহাস, বিজেতার গৌরব-গ্রন্থন –
সেই সমস্ত কিছুর সামনে, নির্গ্রন্থ হয়ে, দাঁড়াও, ভয়হীন
কবীরের মতো দাঁড়াও, শিরদাঁড়া সহ,
ধ্যান হয়ে, গান হয়ে, দাঁড়াও
ভয় যখন রাগ হয়ে আকাশে আঁধার হানে, আঁধারে
বজ্র, বৈকল্প – তখন –
লালনদী নীল হয়ে যায় ক্ষণকাল
ভয়দেখানিয়া ভীত হয় – চাকা থামে।
সেইখানে, যেইখানে থামে, এসো, যুথবেঁধে এসো
প্রেমসহ এসো, এসো কামে ও বিতকামে
খামারে নতুন শস্য হবে বলে এসো
আকাশে নতুন সূর্য্য হবে বলো এসো
এসো সেই ক্রোধ নিয়ে যাকে ব্রাহ্মণ বলে – ‘চণ্ডাল’!
এসো, কারণ, সেইখানে, যেইখানে বসন্ত নামে
যেইখানে মরাভাটি জ্যোৎস্না ও অমাবস্যা মাখে – ধেয়ে আসে
উছল উজান, সকালে সূর্য্য নাচে – রাত্তির হয়ে যায় মাছরাঙা পাখি –
যেহেতু সেইখানে কোনো ঘনান্ধ ব্রাহ্মমুহুর্ত অথবা হিমনীল ভোরের কুয়াশার প্রয়োজন পড়ে না কোনো শহীদের শরীর ঢেকে দিতে অথবা যুপকাষ্ঠ সহ আড়াল করতে জাতক্রোধে হত, হন্তারক অথবা হননকালদের
যেহেতু ভোরের আকাশে ফুলের ঘ্রাণ, বাগিচায় সকল কূজন মালিকানাহীন
যেহেতু সেইখানে আগে ডোম, বাগে ডোম ও ঘোড়ায় ডোম সেজেছে
এবং ঢাক ঢোল ও মৃদঙ্গ বেজেছে, যেহেতু তারায় তারায় কেঁপেছে সেই মাদলাদির বোল এবং সেই বোলের সামনে লুটিয়ে ধূর হয়ে গিয়েছে শমদমদণ্ডভেদী চাল,
যেহেতু সেইখানে মানুষের ঘর্মপ্রাণ প্রতিরোধে ব্যহত হয়েছে ওয়ারিশনলিপ্সু রক্তচোখ ও হোমাগ্নিশিখরের দুর্ধর্ষ লোভ, যুদ্ধের ধু ধু সন্তাপ,
যেহেতু বেদব্যাধিপার সেই অঞ্চল তোমার ও আমার চোখ ও দেখাদের মধ্যিখানে উপস্থিত রয়েছে,
যেহেতু নগরে গঞ্জে ও অরণ্যে এখন ক্রমশঃ উপস্থিত হয়েছে অজস্র ক্ষুধার্ত মানুষ ও বাঘ
যেহেতু কোটি রাজকোষে ক্ষুরধার অসিমুদ্রাদম্ভ এখনো মিলিয়ে দেয় নি সেই চিরকালীন আস্তানা ও তার পথের আভাস - যেইখানে আমরা বারবার ফিরে যাই দুঃখ হলে
দুঃখ পেলে
অথবা দুঃখ এলে
সেহেতু, সেই অনাবিল অঞ্চল, যা আমাদের গন্তব্য
বহুতে ও সমভিব্যাহারে,
সেইখানে, সেই পথে
চেয়ে দ্যাখো -
মাটিতে আনমনে ফুটে আছে অনামা নামের ফুল,
আলগোছে ছুটে গ্যাছে নদী-হাওয়া-রেলগাড়ি,
আকাশে আনমনে ফুটে আছে আজাদী নামের তারা,
মানুষের, পৃথিবীর ভালোবাসা স্বাধীনতা হয়ে গ্যাছে
পৃথিবীর, মানুষের স্বাধীনতা প্রহর বুনেছে।
No comments:
Post a Comment