Saturday, November 13, 2021

আর্ত্যুর র‍্যাঁবোর ওফেলিয়া

 খণ্ড ১


সেই শান্ত কৃষ্ণ জলরাশি যেখানে তারারাজি ঘুমায়
শ্বেত ওফেলিয়া ভাসমান যেন এক সুমহান লিলি;
ধীরে ভাসে সে, লম্বা তার অবগুণ্ঠনে শায়িতা..
- দূর বনে শুনো কোন সফল-শিকার-বিউগল।

হাজার বছরের বেশি হলো দুখি ওফেলিয়া
চলে গিয়েছে, সফেদ এক মায়ামূর্তি, লম্বা ঐ কৃষ্ণ নদী বয়ে।
হাজার বছরের বেশি হলো তার মিষ্ট উন্মাদনা
ফিসফিস স্বরে গেয়েছে ব্যালাড সন্ধ্যা-বাতাসের সাথে।

বাতাসে চুমু খায় তার বুকে, উন্মোচিত স্তবকের মতো
বিরাট সে ওড়নী তার ওঠে ও নামে জলের তরঙ্গ সাথে;
উইলোরা শিরশির কাঁপে, কাঁদে তার কাঁধে,
জলজ শটিরা ঝঁকে পড়ে তার বিস্তীর্ণ, স্বপ্নীল ভ্রু-উপরে।

জলের শাপলা-লিলিরা এলোমেলো ফেলেছে দীর্ঘশ্বাস তাকে ঘিরে;
কখনো কি বা সে ভাবে এমন – যে, কোন ঘুমন্ত ভূর্জবৃক্ষতে,
কোন বাসা ছেড়ে কচি পাখি এক ডানা ঝেঁকে ঝেঁকে গিয়েছে পালিয়ে;
- রহস্যময় কোন অ্যান্থেম-গাথা ঝরে পড়ে সোনালী নক্ষত্রদের থেকে।

খণ্ড ২

অহো পাণ্ডুর ওফেলিয়া! তুষারসম সুন্দর!
হ্যাঁ, খুকি, তুমি মারা গ্যাছো, নদী নিয়ে গিয়েছে তোমায়!
- নরওয়ের সুবিশাল গিরিমালা বয়ে নেমে আসা বাতাসেরা
বলেছিলো নীচুস্বরে তোমায় আরো ভালো এক স্বাধীনতা-কথা।

বাতাসের সেই শ্বাস বাঁকিয়ে ধরে তোমার বিপুর্ণ কেশদাম,
এনেছিলো তারা এক অদ্ভুত গুজবের কথা তোমা’ স্বপন-মনে;
‘প্রকৃতি’-র গান শোনে হৃদয় তোমার
গাছেদের আর্তনাদ, রাতেদের দীর্ঘশ্বাসেদের মাঝারে;

সে ছিলো পাগল সমুদ্রের সেই প্রকাণ্ড গর্জন-স্বর,
যা বিদীর্ণ করে তোমা’ শিশু-হৃদি – বড্ড মানবিক যা, বেজায় পেলব;
এক গরীব পাগলপুরুষ – সে ছিলো এক সুঠাম পাংশু যুদ্ধবীর
যে বসেছিলো, মূক ও নতজানু তোমারই সমীপে কোন সে এপ্রিল প্রভাতে!

স্বর্গ! প্রেম! স্বাধীনতা! – কি সে স্বপ্ন বাছা কি বা উন্মাদনা!
গলালে তুমি তাকে আগুন যেভাবে গলায় বরফ;
তোমারই প্রচণ্ড সে সকল ছায়া-কল্পনা-দর্শন করে শ্বাসরোধ তোমার কথার
- এবং অনন্তের ভয়ালতা সন্ত্রাস হানে তোমা’ নীল নয়নে!

খণ্ড ৩

- এবং, কবি ক'ন, তারকালোকে
তুমি এসো, খুঁজো রাতে, যে ফুল কুড়িয়েছিলে,
এবং দেখেছে সে জলে, শায়িত যে তার লম্বিত অবগুণ্ঠনময়,
শ্বেত ওফেলিয়া ভাসমান - যেন সুমহান লিলিফুল এক।

No comments: