‘বিশুদ্ধ’ লোকায়তের সন্ধানে, তুমি, কবি,
পাও নি মোকাম – বলেছো, রেখেছো
নিষাধের তুণ পরিপূর্ণ – পায়ে পায়ে পার হয়ে
গুড়ি ও থান, সেইখানে, যেইখানে মায়াশূন্য প্রান্তরে
ভীষণ যুজেছে চার্বাক ও নাগার্জুন –
বুঝি এসপার ওসপার ঘটে যাবে শূন্যে ও বস্তুতে
তবু কি পেরেছো? কতো নদী দুইবার, দশবার
পার হয়ে গ্যালো হেরাক্লিটাস, সিজারও পেরিয়েছে
রুবিকন – ইতিহাস রাখে নি তো ফেলে কোনো পিছুটান -
সহসা ছুটে গ্যাছে কৈবর্ত্য ভীমের গেরিলা নৌবহর
সহসা ছুটে গ্যাছে অগণন উল্কা ও দাবানল,
– পাথরে পাথরে সিঁদুর –
দাগ রেখে গ্যাছে সিংবোঙা ও মারাংবুরু – আদিকাল থেকে
আকাশেও আদিপিতা ভাটাচোখ জ্বলে – শুকতারা –
বৃহষ্পতি দেবেন ব্রাহষ্পত্য, পৃথিবীর আদিমাতা –
স্তন তার জেগে থাকে ঘোর – পাহাড়ে চাঁদ উঠে গেলে
উঠোনে মাদূর পাতে প্রজ্ঞা, উনোনে ফুঁ দিলো পারমিতা –
দুয়োর বন্ধ করো লৌকিক – দুয়োরে অজস্র ফুটো
চোখ পাতে যা কিছু প্রাকৃত, যা কিছুর উত্তরণী তাগিদ –
জোনাকি অভয় দেবে রাতভর, তবু,
বন্ধ চোখ, ভয়চুপ শালবন,
দিনমান রেখেছিলো যার স্নিগ্ধ আশকারা
আর এক দিনমানে – আকাশ উতলা হয়েছিলো খুব,
আকাশ ছিলো নীল – নীচে, নীলক্ষেতে
আগুন জ্বেলেছিলো দিগম্বর বিশ্বাস – বহুদূর-দূর তার ধোঁয়া দেখে
চোখ ঢাকে, নাক ঢাকে পাৎলুন-পরিহিত ইতিহাসকার
অথচ যখন হেমন্ত বিকেল হয়ে যায়
ধান কাটা হয়ে গেলে দাহ হয় গরীয়সী কালবেলা
সেইখানে, আধমরা অরুণের মেরুন আলোকে
বুক পাতে, মেঘোমেঘ, মায়ারাঙা গুলালের স্তব ও কার্ণিভালে,
রূপকথা, হিরণ্যগর্ভগাথা, যাপনের পাঠশালা –
যাকিছু ছেড়েছো তুমি, দেখেছো বোর্হেস-চোখে আলেফ-নগরী
শুনেছো নীটশের কানে গর্দভের আর্তনাদ
বিদ্যাসাগরকে পাঠিয়ে দিয়েছো কার্মাটারের ভুট্টাক্ষেতে
এ’মত উপায়ে,
অহম ক্রমশঃ পুষ্ট –
গভীরে জ্বলে কি তবু বোধ-চণ্ডালী?
নিথর থাকে কি তবু শবরী ও অহল্যার স্তব?
যযাতি কি ভুলে যায় তার জরাদুষ্ট কাঙ্ক্ষামঞ্জরী?
এ’মত উপায়ে,
অনেক ক্ষত নিয়ে সমস্ত শরীরে,
অগণন ভুলোনদী পরিক্রমা করে,
অযুত অস্থিচর্মসারে মিনার ও চিমনী তুলে
ছেড়েছো সহজপাঠ, মুছেছো চৈতন্যে শিকড়ের ঘ্রাণ
বহু ছেড়ে হয়েছো একক –
একক ছেড়ে, ক্রমশঃ, একলা।