Saturday, April 27, 2013

Sri-Sri Bondhu-Mongol Kabyo


ওঁ শ্রীশ্রীবন্ধুমঙ্গল কাব্য
প্রথম পর্ব – নগরলুণ্ঠণ
চন্দ্রচিকন নগরীর বুকে ঘাতকেরা ঐ জাগিছে রে
অসহায় শত নাগরিক হায় জীবনভিক্ষা মাগিছে রে
ঘাতকহস্তে তীব্র ছুরিকা শনশনশন চলিছে ঐ
নিশিথ-আঁধার ছিন্ন করিয়া ভয়াল আগুন জ্বলিছে ঐ
প্রাণের মুল্য তুচ্ছ হৈল কুজ্ঝটিকার কন্দরে
ঘাতককুলের ঢক্কনিনাদ বাজিল নগরে বন্দরে
খুনির লালসা তীক্ষ্ণ হৈল কাঁপিলো নগর থরথরি
শোনিতধারায় সিক্ত হৈল ভীতিথমথম শর্বরী
ঝিঁঝিঁর ঝিঝিঁট স্তব্ধ করিয়া গরজি উঠিল রিভলভার
নিথর হৈয়া লুটায়ে পড়িল ন্যায়রক্ষক টহলদার
পুনঃপুনঃ ছুটিলো বুলেট ঝাঁজরা হৈলো নাগরিক শত
ছুরিকার ঘায় কত অসহায় হৈলো রে হায় ক্ষতবিক্ষত
সর্পিল যত রাজপথে ঐ অবিরাম চলে মেশিনগান
হৃদয়হীনের ঘৃণার কোপেতে চন্দ্রনগরী মুহ্যমান
নিঠুর ঘাতক লুঠিছে সকলি পথ-প্রান্তর রোরুদ্যমান
নগরপ্রান্তে লাশের রাশি স্তুপিয়া উঠিছে পাহাড়প্রমাণ
লাশের মাংস খুবলি খাইয়া হুক্কা হাঁকিছে শৃগালের দল
রোহিতগন্ধে মত্ত আসিছে রক্তচক্ষু নেকড়ের ঢল
হিংসার নেশা চাগিয়া উঠিছে ঘাতক অট্টহাসিতেছে
বোধ হয় বুঝি নভোমণ্ডল রক্ত-আঁধারে ভাসিতেছে
কোনো কৃপা নাই ঘাতকের ঐ ক্রুরকুঞ্চিত চক্ষে রে
আক্লেশে হের গাঁথিছে ছুরিকা কোমল শিশুর বক্ষে রে
হায় রে ফকির হায় রে গাজি হায় রে আমার পরাণপীর
চন্দ্রনগরী উদ্ধারিতে আগুয়ান হ’বে কোন সে বীর?
দ্বিতীয় পর্ব - আগন্তুক
নগরীর কিছু বাহির-প্রান্তে দণ্ডায়ময়ান আগন্তুক
মিশিয়া রহিছে নিথর আঁধারে হস্তে লহিয়া ভীমবন্দুক
কোমরবন্ধে শোভিছে তাহার তিখন তীব্র তরবারী
খরদৃষ্টিতে ঠাহর করিছে জ্বলন্ত সব ঘরবাড়ি
চক্ষুযুগলে জ্বলিছে তাহার রুষ্টকঠিন অঙ্গীকার
আকাশ-বাতাশ থরথরিছে হেরিয়া হ্যানো ভঙ্গি তার
বজ্রমুষ্ঠি কঠোর হৈছে ভয়ালকঠিন প্রতিজ্ঞায়
কে এই পুরুষ? রহিয়াছে সে কোন লগ্নের প্রতীক্ষায়?
বুটের ধুলিতে অনুমান হয় হাঁটিয়াছে সে অযুত ক্রোশ
অথচ ক্লান্তি স্পর্শে নি তারে এমনি প্রবল তাহার রোষ
তাহার সামনে মানিয়াছে হার হাজার ঝঞ্ঝা বিপর্যয়
চরম প্রহারে খণ্ড হই’ছে সকল বিপদ সকল ভয়
উহার সুমুখে পথ রুধিবার রাখে না সাহস কেহ আজি
কম্পি কম্পি চূর্ণিছে বুঝি চন্দ্র-তারকা-গ্রহরাজি
যক্ষ-রক্ষ-দানব হৈল ভীতিবিহ্বল শঙ্কিত
স্বর্গের সব দেবতাও বুঝি হৈয়া গিয়াছে স্তম্ভিত
প্রলয় লৈয়া চণ্ডানন্দে খেলিছে সে আজ কোন খ্যালা?
নাবিক হৈয়া মত্ত সায়রে ভাসাইলো সে কোন ভ্যালা?
ললাটে তাহার দৃপ্ত দীপ্তি দিব্যকান্তি বিদ্যমান
লৌহকঠোর বক্ষ তাহার ভেদিতে পারে না মরণবান
হস্তে লহিয়া ভীমবন্দুক কোমরবন্ধে তরবারি
ঘোর দুর্দিনে আসিলো সে আজ ত্রাতিতে শতেক নরনারী
 মৈনাক সহ শত পর্বত কম্পিছে হের থরথরি
চন্দ্রনগরে দুষ্টে দমিবে পুলিশবন্ধু চৌধুরী।  

তৃতীয় পর্ব - পূর্ববৃত্তান্ত
চন্দ্রচিকন নগরীর হতে অযুত যোজন দূর
হুহু নদীর পূর্বে ছিল সূর্য্যকিরীট পূর
তথায় ছিল নগরপালক অনাথবন্ধু বীর
কর্মে ছিলো কৃতনিশ্চয় ধর্মে যুধিষ্ঠির
দুষ্টে তারে ডরাত আর শিষ্ট পেত বল
সূর্য্যমূখী ফুটত তথায় আনন্দে উচ্ছ্বল
হুহুনদী চলত ছুটে সুখসায়রের পানে
নিত্যি তথায় চড়ত বলি সূর্য্যদেবের থানে
সূর্য্যনগর বক্ষে ছিলো রৌদ্রজ্জ্বল পূরী
সপরিবার নিবাসে তথা অনাথ চৌধুরী
সহসা এক চরম দিনে ঘনায়ে এলো মেঘ
ক্রমে ক্রমে উঠল বেড়ে খরমরুৎ বেগ
হঠাৎ কখন লুটায়ে পড়ে নিতাই কবিয়াল
ত্রস্ত হাম্বা রব রবিছে শতেক ধেনুপাল
নগরজুড়ে হৈলো শুরু তুমুল হুলুস্থুল
আঁধারদানোর রাজ্য হতে আইছে ঘাতককুল
অই শুনো তার রণহুঙ্কার, বাদ্যে রণভেরী
অই যে ওরা আইছে ধেয়ে বক্ষ কাঁপে হেরি
ক্রন্দসী হায় ক্রন্দি উঠিলা তীব্র পদভারে
নিঠুর ঘাতক পিস্তল হ’তে সপাট গুলি মারে
ঘৃণাথরথর চক্ষুসকল জ্বলিতেছে ধিকিধিক
দেখিতে দেখিতে ভস্মীভবন হৈল চতুর্দিক  
ভীতিজর্জর সূর্য্যপূরীর হৈলো বুঝি কাল
হেনকালে হেরি নামিলেন পথে অনাথ নগরপাল

চতুর্থ পর্ব – অনাথের প্রতিরোধ
রণসজ্জায় সজ্জিছে আজ অনাথ চৌধুরী
বীরত্বে যার তিন দুনিয়ায় নাইকো কোনো জুড়ি
হস্তে তাহার কালম্যাগনাম স্কন্ধে মেশিনগান
কোমরবন্ধে জ্বলিতেছে অসি পৃষ্ঠে হাজার বাণ
চক্ষে তাহার ক্ষত্রত্বেজী অগ্নি জ্বলে স্থির
দৃপ্ত পদে যুদ্ধে চলে অনাথবন্ধু বীর
দীপ্ত চ্ছটায় উদভাসিত উহার উষ্ণীষ
উদয়ভানুও করিতেছে বুঝি উহারেই কুর্নিশ
(হ্যানো) স্পর্ধা হেরি সূর্য্যপুরী হৈলো উৎসাহী
জয় জয় বলো লড়বে অনাথ আর কোনো ডর নাহি
‘ত্রাতিবো নগর মরণপনে’ লহিয়া হ্যানো শপথ
(সে) সূর্য্যতোরণ সম্মুখী আসি রুদ্ধ করিলো পথ
লক্ষ ঘাতক আসিতেছে ধেয়ে ছুঁড়িতেছে কোটি তির
রুধিয়াছে পথ একাকী যুঝিবে অনাথবন্ধু বীর
লাখোলাখ বাণে আসমান ক্রমে হৈছে কৃষ্ণ ঘোর
হাঁকিছে ঘাতক “খুল দরওয়াজা, নহিলে বিপদ তোর!”
ছুটিতেছে গুলি ছুটিতেছে গোলা ছুটিছে তীব্র শেল
ধরণীবক্ষে জাগিতেছে বুঝি দোজখ-নরক-হেল
পুনঃপুনঃ বিদারিছে নভোঃ তীক্ষ্ণ আর্তনাদ
চরাচর হের হায় হায় বুঝি হৈলো রে উন্মাদ
তথাপি অটল কর্মে দণ্ডি অনাথবন্ধু বীর
(যেন) পক্ষীমাতা আগলাইছে পরম স্নেহনীড়   
সহসা আকাশ ছিন্ন করিল বিপুল হুহুঙ্কার
“হুকুমদার! খবরদার! খুলিবে না এই দ্বার!”

পঞ্চম পর্ব – অনাথের পতন
রণহুঙ্কারে নিকটে আসিয়া পড়িছে ঘাতককুল
যুঝিছে অনাথ ঘাতকদলেরে করিতে নির্মূল
বর্মে ঠিকরি ছিটকাই পড়ে হাজার মরণবান
শতঘাতকের মুণ্ড চূর্ণী ছুটিছে মেশিনগান
মুহুর্মুহু কালম্যাগনাম উঠিছে ঝলসি প্রবল
সাবাস লড়িছে অনাথবন্ধু মরিছে ঘাতকদল
শোনিতধারায় সিক্ত হৈয়া চলিতেছে তরোয়াল
কুঞ্চি’ বুঝি যাইছে ক্রমে কালের কুটিল ভাল
লৌহকঠোর বক্ষে বিঁধিছে বুলেট-বোমা-শেল
খতম তবু হয় না আহা বীর অনাথের খেল
একাকী সে বীর বধিতেছে আহা ঘাতক লক্ষ লক্ষ
গুরুগুরু বুঝি বাজিবে এ’বার মত্ত বিজয় ঢক্ক
ঘাতকশোনিতে রঞ্জিত হৈ’ হুহুনদীর বারি
ভাসাইয়া লয় ঘাতকের শব নিথর সারিসারি
সূর্য্যতোরণ সম্মুখে বীর লড়তেছিলো একা
সহসা কখন অমোঘ হৈল দৈব লিপিলিখা
ঘাতকছুরিকা বিন্ধি’ গেল বীর অনাথের বক্ষে
হায় রে আমার সূর্য্যনগর, নাই রে তোর আর রক্ষে
তোরণ সমীপে লুটায়ে পড়িলো ক্ষাত্রবীরের দেহ
হেরিয়া ইহা অশ্রুধারা রুধিতে না পারে কেহ
করুণ অরুণ ঢলিয়া পড়িল শ্রান্ত গোধূলিপটে
ধর্মসূরজ ডুবিলো রে হায় হুহুতটিনীর তটে
সূর্য্যপুরীর সকল আলোক নিবিল সাথে সাথে
সূর্য্যতোরণ চূর্ণ হৈল প্রবল পদাঘাতে

ষষ্ঠ পর্ব – ঘাতককূলের নগরনাশ
পথ-ঘাট-গেহ-প্রাসাদ-প্রাচীর সকলি সবলে নাশিয়া
নগরে পশিল ঘাতকসকল নিঠুর কুটিল হাসিয়া
সূর্য্যনগরে সূর্য্য ঢলিল চির অস্তাচলে
(যেন) ভ্রমকাননে মত্ত করী কোমোল কমল ডলে   
সেই মত হায় ঘাতক করিল নগরীর দুর্দশা
নগরীবক্ষে ক্রমশ নামিল শীতল চিরনিশা
ঘাতকের ঘায় প্রবল প্রলয় আসিল তথায় হায়
কত প্রাণনাশ করিল ঘাতক চরম অবলীলায়
হানিল ভল্ল চালাইল চাকু জ্বালাইলো শত আগ
নাগরিককূল ভীতিথরথর (যেন) যুপকাষ্ঠ-ছাগ
ছুটিল গ্রেনেড, জ্বলিল বারুদ, চলিল মলোটভ
আকুল আকাশ দীর্ণ করিলো কাতর আর্তরব
মরিল সকল নাগরবৃন্দ কত না যাতনা সহি’
সে কথা ভাবিয়া চক্ষু না ভিজে এমত পাষাণ নাহি
কুলনারীগন দগ্ধি মরিল সহিয়া কত না ক্লেশ
নিথর চকোরী রহিল চাহিয়া অসহায় অনিমেষ
তথাপি ঘাতক ভ্রুক্ষেপহীন বহিয়া চলিছে খুন
আসিছিলা বুঝি নগরীর বুকে উতল টাইফুন
রক্তলোলুপ মত্ত ঘাতক সকলি করিল ছার
আবালবৃদ্ধবনিতা কেহৈ পাইলো না নিস্তার 
গেণ্ডু’ খেলিল পাষণ্ডকুল শিশুর মুণ্ড কাটিয়া
আর বর্ণিতে অপারক রহি বক্ষ যাইছে ফাটিয়া
নগরীর বুকে চিরতরে হায় নামি গেলা যবনিকা
কে বা পারে কভু খণ্ডাতে অই কালের লিপিলিখা?

সপ্তম পর্ব – শিশু-পুলিশ বৃত্তান্ত 
নগরীর মাঝে সেই যে ছিল অনাথবীরের-প্রাসাদ
তথায় তখন নামিয়াছিলা চরমতম বিষাদ
সূর্য্যনগর হৈছিলা যবে এইমতে ছারখার
অনাথজায়া লৈল তবে কঠোর অঙ্গীকার
‘দুষ্ট ঘাতক লৈছে যাহা সকল লৈয়া লৌক
রক্ষা করিব পুত্ররে মম যেমন করিয়া হৌক’
পুত্র তাহার পরমপ্রিয় ছোট্ট পুলিশ চৌধুরী
রুপে গুণে দুষ্টামীতে নাই ছিল তার দুই জুড়ি
অনাথ যবে ঘাতক-সনে মরণপণে যুঝছিলো
পুলিশ তবে উহার নিকট যাইবার পথ খুঁজছিলো
পিতার ন্যায় যুঝিবেই সে এমনি তাহার সাধ
ঘাতকের সনে লড়িবার হের বিটকেল আহ্লাদ
প্রবল লড়িয়া অনাথ মরিল ভাঙিল তোরণদ্বার
নগরে পশিল ভীষণ ঘাতক সকলি করিল ছার
সূর্য্যনগরী ডুবাইলা খুনী হিংসার হলাহলে
তথাপী তোরণ-অভিমূখে হের পুলিশ শিশু চলে
তথায় পহুঁছি হেরিয়া পিতার শোনিতস্নাত তনু
কহিল পুলিশ ‘আজ হতে আমি শপথবদ্ধ হনু
পিতৃঘাতকে বধিবই আমি, এ মোর অঙ্গীকার
রে ঘাতককুল, কোনোমতে তোরা পাইবি না রে পার’
এমতে আপনে বান্ধি’ ফেলি কঠোর অটল শপথে
(সে) পিতৃদেহ টানিয়া চলিল আপন গৃহ-পথে
পুত্রে টানে আপন পিতার মৃত্যুনিথর দেহ
(হেন) দৃশ্য হেরি অশ্রুধারা রুধিবে কেমনে কেহ?

অষ্টমপর্ব – পলায়ন ও প্রাণরক্ষা
প্রাসাদে পহুঁছি আপন মাতারে লৈল পুলিশ ডাকি
কোমল হস্তে মুছি দিলা তার অশ্রুসিক্ত আঁখি
কহিলা মাতারে ‘প্রাসাদের তলে রহিয়াছে চোরকুঠুরী
তথা হৈতে চোরাপথ গেছে ছাড়িয়া প্রাসাদ-পুরী
কেহ নাহি জানে ইহার বিষয়ে এ পথ অতি গোপন
একদা এ পথ হেরিয়াছিনু দুঁহুঁ চক্ষে আপন
মাতা-পুত্র চলিল দোঁহে গোপন চোরাপথে
মাতার শপথ আপন পুত্রে বাঁচাইবে কোনোমতে
পশ্চাতে তার পুত্র চলে পিতার দেহ স্কন্ধে
প্রতিশোধ-স্পৃহা নিদারুণ জ্বলে সকল রন্ধ্রে রন্ধ্রে
মাতার নিজ হস্তে ছিল বিপুল সে এক সিন্দুক
পুত্র কহে ‘হে মাতঃ মোর, ঘুচিবে ইহাতে কোন দুখ?’
মাতা কহে ‘জানিবি রে বাছা হৈলে সময় ঠিক
ইহার মহামন্ত্র বলে জ্বলিবে দিগ্বিদিক’
গোপন সে পথ হৈল অন্ত নগর হ’তে দূর
নিশার শেষে উদয়ভানু বান্ধে আপন সুর
সম্মুখে অই কুলুকুলু বহে হুহু নদীর ধার
তথায় পুলিশ বান্ধে চিতা আপন বীর পিতার
মাতা কাঁদে পুত্র কাঁদে চিতায় জ্বলে পিতা
হেন অশ্রু কদ্যপি কি বহিতে পারে বৃথা?
নদী-পার্শ্বের গড়িল দোঁহে দীন পর্ণকুটির
তথায় ক্রমে উঠল বেড়ে পুলিশবন্ধু বীর
বনের পানে ধাইতো কিশোর নদীর জলে নাইতো
দিবস রজনী গুনগুনাইয়া সমরগীতি গাইতো

নবম পর্ব – অনাথের যৌবনপ্রাপ্তি
অনাথ জায়া পরম যতনে আপনা পুত্রে পালিল
নিজ পুত্রের মঙ্গল তরে কত না স্নেহ সে ঢালিল
দেখিতে দেখিতে কিশোর ক্রমে হৈয়া উঠিল যুবক
ধিকিধিকি তার বক্ষে জ্বলিল লেলিহান কোন পাবক
মৃত্তিকা ক্রোড়ে লালিত পুলিশ যৌবনমদে মত্ত
অথচ পরম শ্রদ্ধাভরে সে মাতারে পূজিত নিত্য
ঘন বন হতে শশক শিকারি ক্ষিপ্র ধনুষ চালায়ে
ফিরিত সে গেহে যেথা মাতা রহে নিটোল পিদিম জ্বালায়ে
সমস্ত দিন কাটিত তাহার নদী-জংগলে উদ্দাম
প্রাকৃত স্পর্শে হৈল যুবক দুর্মদ, দুর্দম
পুলিশ-জননী কাটাইত দিন নানাবিধ ক্রিয়া কর্মে
না জানি কি শোক বিঁধিত সদাই তাহার হিয়া-মর্মে
শয়নে স্বপনে আধো-জাগরণে অনাথের মুখ হেরি
অক্ষিযুগল হৈতে তাহার কত না ঝরিত বারি
নেহারি মাতার এমনধারা হৃদবিদারী দুখ
বিষাদী হৈয়া যুবা-পুলিশের শুষ্ক হৈত মুখ     
শৈশবস্মৃতি ভর করিয়া আসিত কাতারে কাতারে
পুলিশবন্ধু কহিত বচন আপনার প্রিয় মাতারে
“উঠ জননী, বেলা বহি যায়, করিওনা শোক আর
শুধিব পিত্ররক্তঋণ, এ মোর অঙ্গীকার!”
পুলিশ-জননী নিজ সন্তানে কহিত পরম স্নেহেতে
“বাছা মোর, জানি এমনি তাকত রহিয়াছে তোর দেহেতে
ঘাতকে বধিয়া তথাপি কি তুই আনিবি পিতারে ফিরায়ে?”
নির্বাক যুবা রুধিত অশ্রু নিজ মস্তক ঘুরায়ে

দশম পর্ব – বিপর্যয় ও পুনঃ-প্রতিজ্ঞা
পর্ণকুটিরে আসিল সহসা চরম দুর্দিন
পুলিশ-মাতারে দেখিল ঘাতক ঘুরায়ে দূরবীন
মাতা-পুত্রেরে খুঁজিছিলা তারা হৈয়া ভীষণ হন্যে
আহার-নিদ্রা ঘুচিয়াছিলা মাতা-পুতের জন্যে
পথ প্রন্তর পার হৈ আসি হের কত অনায়াসে
জীর্ণ পর্ণ কুটিরে হায় রে নিঠুর ঘাতক পশে
কুরুক্ষেত্রে যুধিষ্ঠির যেমতি বধিলা শল্য
ঘাতক তেমতি মাতার বক্ষে হানিলা বিষম ভল্ল
আচম্বিত আঘাত খাই’ লুটায় পুলিশ-মাতা
জীবনতরু হৈতে তাহার খসিল সকল পাতা
পদাঘাত করি মাতার দেহেরে করিয়া অবহেলা
পরমানন্দে সেই স্থান হ’তে ঘাতক চলিয়া গেলা
পুলিশ ফিরিয়া সাঁঝবেলাতে হেরিল না জ্বলে দীপ
সশঙ্কিত বক্ষ তাহার করিল ঢিপিঢিপ
পশিয়া হেরিল এ কোন দৃশ্য আপনা গেহের মাঝে!
তাহা বর্ণিতে হায় রে কলম কিছুতে সরিছে না যে
কুটির মাঝারে ঢলিয়া পরিছে তাহার মৃত মাতা
গোধূলিকরুণ অরুণের ন্যায় হৈয়া রক্তস্নাতা
পুলিশবন্ধু করিতে না পারে অশ্রু সংবরণ
বুঝিল কাহার তরেতে মাতার হৈ’ছে হেন মরণ
দাউ দাউ করি’ শিরায় শিরায় জ্বলিয়া উঠিল আগ
হুঙ্কারিল “পামর, এবে পরাণভিক্ষা মাগ!
লুকাশ যদি অন্তরীক্ষে পশিশ যদি পাতালে
তথা প্রবিশিয়া ঘৃণ্য শরীর লুটাইবো তোর ভূতলে!”

একাদশ পর্ব – পুলিশবন্ধুর যুদ্ধযাত্রা
হুহুনদীর পাড়ে যথা জ্বলিয়াছিল পিতা
তথায় পুলিশ জ্বালায়ে দিল আপন মাতার চিতা
শত শোকে ক্রোধে প্রবল হৈল ক্ষাত্রবীরের ধর্ম
আপনা অঙ্গে ধারিল পুলিশ আপন পিতার বর্ম
পরম নিষ্ঠে সান দিল সে পিতার তরোয়াল
গহন আঁধারে বনে ও বাদারে ডাকিল খেঁকশিয়াল
চন্দ্র তারকা কাঁপিয়া উঠিল পুলিশবীরের রোষে
ঘাতককুলের অন্ত আসিছে উহাদেরি নিজ দোষে
হ্যাঁচকা টানেতে খলিল পুলিশ মাতার বহা সিন্ধুক
তথা হৈতে আনিল বাহিরে থ্রী নট থ্রী বন্দুক
পকেট ভরিয়া লৈল সে বীর অযুত নিযুত টোটা
পুলিশবন্ধু সজাগ ভীষণ নহে সে মাথামোটা
দ্রিমিদ্রিমদ্রিম মন্দ্র মন্ত্রে বাজিল রণভেরী
সাবাস রে বীর চল সমরে করিস নে আর দেরী
হস্তে পুলিশ ভীমবন্দুক লৈল সবলে উঠায়ে
ঘাতকের পানে ছুটিলা পুলিশ প্রলয়মরুৎ ছুটায়ে
অরণ্যানীর প্রাণীকুল সবে হেরিয়া হেন ত্বেজ
ছোটে রক্ষিতে নিজ নিজ প্রাণ গুটাই’ স্ব-স্ব লেজ
সশঙ্ক হাঁকে দানবের দল ‘যে যেথা পারো হে ভাগো!’
তুমুল হরষে দেবগণ কহে ‘জাগো মহাবলি জাগো!’
গগনে গগনে বাদিলা দামামা মেদিনী উঠিলা কম্পি
পাপের তারসে রৌরববাসী উঠিলা লম্ফি ঝম্পি
সকল বিপদ সকল বান্ধা হেলায় করি’ ছিন্ন
তড়িদবেগে পুলিশ ধাবে ঘাতক পদচিহ্ন
যুগল নেত্রে রোষের মশাল তীব্র হৈ’ জ্বলে
বীরবিক্রমে বীরপুঙ্গব মহাসংগ্রামে চলে

দ্বাদশ পর্ব – পুলিশবন্ধুর সংগ্রাম
চন্দ্রনগরী সমীপেতে আসি’ পুলিশ করে নেহার
উক্ত নগরী ঘাতকের কুল করিতেছে ছারখার
নগরীপ্রান্তে শ্মাশানের বুকে নেকড়ে-চক্ষু জ্বলিছে
নগরীর বুকে তীব্র শবদে বোমা-বন্দুক চলিছে
দাউ দাউ করি’ প্রবল দাহিছে সকল বাড়িঘর
অপরাধহীন নাগরিককুল করি’ছে আর্তস্বর
দেখিতে দেখিতে পুলিশ-অক্ষি ধারিল রক্তবর্ণ
চরাচর বুঝি নিথর হৈল নড়িতে ভুলিল পর্ণ
এক্ষণে বোধি চূর্ণ হৈবে পাতাল মর্ত্য স্বর্গ
চণ্ডিকা বুঝি তুলিয়া ধরিছে আপন করাল খড়গ
চন্দ্রচিকন নগরীর পানে ধাহিল পুলিশবীর
বক্ষ যাহার পর্বতসম উচ্চ্ব যাহার শির
রক্তে তাহার ঘুর্ণি ছুটায়ে ঘাতকঘাতী হ্লাদ
আকাশ ফাটি’ জমিন ফাটি’ করিলা ভীষণ নাদ
অত্যাচারীর খরপর্বত এইবারে বুঝি টলিল
হিংসামত্ত ঘাতকরাজ্য এইবারে বুঝি স্খলিল
জীমূৎ-নিভৃতে চরম ভীতিতে লুকাই’ পড়িছে চকোরী
দ্যুলোক ত্যাজি তারকারাজি আঁধারে ধরিছে আঁকড়ি
পুলিশের ভয়ে ঘাতক পলায়ে পাইছে না হের পার
ঠকঠকাইয়া কাঁপে উহাদের মালাইচাকির হাড়
ক্রোধে উন্মাদ পুলিশবন্ধু ঘাতক নাশিয়া চলে
শত ঘাতকের নিথর দেহ সে পদতলে হের দলে
ঘাতকরুধিরে রঞ্জিত হই’ উঠে পুলিশের অসি
ভীমবন্দুক গরজি দিতেছে ঘাতকমুণ্ড খসি
একে একে ক্রমে সকল ঘাতক হারাই’ ফেলে প্রাণ
ঘাতকনখর হৈতে নগর পাইলা পরিত্রাণ

ত্রয়োদশ তথা অন্তিম পর্ব – পুলিশবন্ধুর অভ্যর্থনা ও ধর্মপালন
পিতার রক্ত মাতার রক্ত সমস্ত ঋণ শুধি
পুলিশবন্ধু নিকাশ করিল রুধির-অম্বুধি
এমনি উপায়ে হরণ করিয়া লাখো ঘাতকের প্রাণ
পুলিশবন্ধু রাখিলো হের আপন পিতার মান
নিঠুর ঘাতক-দলেরে পুলিশ প্রেরিয়া রৌরবে
মাতৃআত্মা উদ্ধারিল সস্নেহ গৌরবে 
রক্ষা পাইয়া নাগরিককুল ধন্য ধন্য করিল
স্বর্গ হৈতে না জানি কতৈ পুষ্পবৃষ্টি ঝরিল
ঘাতক মরিল নগর বাঁচিল কাটিয়া গেল রাত
কালের নিদানে হাজিরা ঘোষিল স্নিগ্ধ সুপ্রভাত
পরম সুখেতে শত যুবতীরে করিয়া লহি’ রমণ
চন্দ্রনগরী হৈতে তাহার ঘটিল নিষ্ক্রমণ
নগরবাসীরা করিল স্যাল্যুট গাহিল বিদায়গীতি
পুলিশের তরে সকলেরই আহা জাগিল হিয়ায় প্রীতি
পৃথিবীর পথে চলিছে পুলিশ চিরউজাগর প্রহরী
কেহ নাহি পারে রাখিতে উহারে কোনো মায়াবলে ধরি’
দুষ্টদমন করিয়া চলে পুলিশবন্ধু বীর
কর্ম যিনি চিরসচেতন ধর্মে যিনি ধীর
সকল বাঁধা সকল বিপদ উহার নিকট তুচ্ছ
ময়ূর বুঝি নাচিয়া উঠে উতলি আপনা পুচ্ছ
তারায় তারায় প্রতিধ্বনি তুলিছে উহার বুট
যেন জলের খোঁজে সুঠাম চলে শান্ত মরুঊট
অতন্দ্র তার তীব্র ভিজিল নিবিড়-নিথর-ঠায়
পাংশুবরণ পাপীকূল সবে করিতেছে হায় হায়
একে একে সব পাতকেরে বীর পাঠাইবে যমপূরী
(বলো) ধন্য ধন্য ক্ষাত্রবৃষভ পুলিশ চৌধুরি
সমাপ্ত

1 comment: