Wednesday, October 10, 2018

সেই, তাকে


এক যে ছিলো শুকতারা তার বুকের ভিতর টান
গুঁড়িয়ে দিলো সাগর জমিন আসমান খানখান
এক যে ছিলো দখিন বাতাস লুঠতরাজের দেশে
যেমন করে সকল নদী সমুদ্দুরে মেশে
তেমনি করে চাইতো বাতাস তারার ভালোবাসা
উড়লো কুটো, বুকের ফুটো, ঝড়ের বাবুইবাসা
এমনি ধারায় বন্যা এলো এলো ভীষণ খরা
জেলের জালে অথৈ জলে চাঁদ পড়েছে ধরা
সন্ধ্যাতারা ভয় পেলে খুব তাকেও ধরে পাছে
এমনি ভেবে দৌড়ে ধেয়ে লুকায় ডালিম গাছে
দখনে বাতাস দেখলে তারা আকাশথানে নেই
ডুকরে ওঠে মাঝদরিয়ায় – কোথায় তারে পাই?
হন্যে হয়ে উথালপাথাল করলে চারিদিক
কলজে জুড়ে ব্যথার আগুন জ্বললো ধিকিধিক
খুঁজলো জুড়ে তেরো নদী সাত সায়রের পাড়
পথিক ডেকে শুধলো তারার হদিশ বারেবার
আকুল হয়ে মরূর দেশে ভাঙলো বালিয়াড়ি
গুঁড়িয়ে দিলো রঙমহলা রাজা-প্রজার বাড়ি
ভাঙতে ভাঙতে হাজির হলো ডালিমগাছের তলে
পাতার আড়ে ঝিকমিকিয়ে সন্ধ্যাতারা জ্বলে
বেকুব বাতাস জানতো না যা জানতো সকল পাড়া
সাঁঝগগনের সন্ধ্যাতারাই ভোর হলে শুকতারা
মিচকে হেসে ভাবলে তারা – এমনি আকাট হয়!
না জেনে সে চাইছে পেতে, খুঁজছে আকাশময়!
বললে তারা – এমনি ধারা খুঁজবে কতো আর?
বললে বাতাস – চৌদ্দ ভুবন সকল ছাড়খাড় 
ধ্বংস হবে দীনদুনিয়া না পাই খুঁজে যদি
দগ্ধ হবে কালের শিখা টলবে রাজার গদি
বললে তারা – ভাঙবে যদি, গড়তে শেখো আগে
তাই না হলে পুড়বে মিছাই আগুনগলা রাগে
বললে বাতাস – ভিতরখানা আউলবাউল করে
সকল আলো মিলিয়ে গ্যাছে, সুখ নেই আজ ঘরে
বললে তারা – পাবেই তারে, শান্ত করো মন
যেমনি ধারায় ফকির পেলে সাতশো রাজার ধন
-      ধন চাই নে মান চাই নে চাই তো শুধু তাকে
ফুঁপতে থাকে দখিন বাতাস পাতার ফাঁকে ফাঁকে
বললে তারা – একখানি কাজ করার আছে বাকি
করলে পরে পাবেই তারে নেই তো এতে ফাঁকি
বাতাস কহে - কী কাজ? বলো, কোরবো মরণপণ
তাহার তরে বাঁচবো আমি যুঝবো সকল রণ  
বললে তারা – অমানিশার রাত্রি আজি ঘোর
ভালোবাসার জন্যে তোমায় সাধতে হবে চোর
চাঁদের বুকে সেই যে ছিলে আদ্যিকালের বুড়ি
কোথায় সে আজ চরকা কাটে? চাঁদ গিয়েছে চুরি!
পূর্ণিমাতে জেলের জালে পড়লে ধরা চাঁদ
আলোর পিঠে তারায় তারায় পৌঁছলে সম্বাদ
চন্দ্রমা আজ বন্দী আছে জেলের গোপন ঘরে
কেউ না জানে কোন মুলুকে অশ্রু ঝরে পড়ে  
জানি আমি কারণ আমি কালপ্রহরী তারা
যা কিছু হয় আলোর মালায় জাগিয়ে তোলে সাড়া
দখনে বাতাস, মন্দ লয়ে ঈশানকোণে যাবে
জেলের ঘরে বন্দিনী সেই চন্দ্র খুঁজে পাবে
সমস্ত দিন শ্রমের ফলে ঘুমায় জেলে রাতে
দুখজাগানি দিনের সনে উঠতে হবে প্রাতে  
জুড়িয়ে দিয়ো তপ্ত দেহ জুড়িও জেলের মুখ
জুড়িও সে তার জঠরজুড়ে জ্বলতে থাকা ভুখ
হাজার বছর শোষণনামা পাথর ঠেলে সে
চাঁদটি পেয়ে ক্লান্ত সুজন ঘুমিয়ে পড়েছে
স্বপ্ন দিও এমন তারে মুক্ত পূর্ণমসী
লড়াই করে ছিনিয়ে নেবে মানব-ইমান-শশী
আজ যেখানে ধূধূ মরূ কালকে সবুজ ঘাস
সময়নদী বাঁক নেবে ফের গড়তে ইতিহাস
শোষণ পাহাড় চূর্ণ হবে পাথার হবে লীন
স্বপ্নসকল সাকার হলে ঘুচবে কালের ঋণ
এমনিধারা স্বপনসুখে বিভোর হবে জেলে
সেই না বুঝে ঘর থেকে তার চাঁদটি এনো তুলে
মুক্তি পেয়ে হেমচন্দ্র আকাশ পানে ধাবে
অমানিশায় পূর্ণমসী জগৎ নেহার পাবে
যেমনি শোনা তেমনি করা দখিন বাতাস ধায়
অমাবস্যায় চাঁদ দেখে সব বেকুব বনে যায়
রামধনুকের গোলকমালা গলায় নিয়ে জ্বলে
তারার সনে মেঘের সনে জগদ্পথে চলে
ভোরের আভাস, জাগছে জেলে, পায় না তবু শোক
চোয়াল আঁটে, শোষণ সনে যুঝবে মানব-লোক
ডালিমগাছের তলায় গিয়ে থমকে গেলো হাওয়া
এক লহমায় চাওয়ার সনে মিললো এসে পাওয়া
সাঁঝআকাশের সাঁঝতারা সে সূর্যোদয়ের কালে
ঝিলিকমিলিক হাসছে হের ঘোরগগনের ভালে
সন্ধ্যাতারাই শুকতারা হয় হায় রে নাহি বুঝি’
উলটপূরাণ দীনমুলুকে বৃথাই তারে খুঁজি
বুকের ভিতর রাখবো তারে আঁকড়ে চিরদিন
এমনি ভেবে সুখসায়রে বইলো সীমাহীন
বইলো মরুৎ রইলো তারা জুড়লো নটেগাছ
যেই যেখানে আছিস তোরা, বাঁচার জন্যে বাঁচ